চট্টগ্রামের বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোডে পাহাড়ের পাদদেশে অবৈধভাবে গড়ে তোলা তিন শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করার বিষয়টি প্রশংসার দাবি রাখে।
জানা গেছে, গত সোমবার দিনব্যাপী অভিযানে এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে ওঠা এসব অবৈধ স্থাপনার যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে নির্মাণ করা হয়েছিল, সেগুলো ভারি বর্ষণজনিত কারণে যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারত। অতীতে বিভিন্ন সময় বর্ষায় পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে এবার বেশ আগেভাগেই তৎপরতা শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। এর আগে মাইকিং করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরে যেতে বলা হলেও অনেকে তা মান্য করেনি। এমন উচ্ছেদ অভিযান অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় দ্রুত পরিচালনা করা দরকার।
সচেতনতার অভাবে পাহাড়ের পাদদেশে বসতি স্থাপন করে দরিদ্র মানুষরা এর খেসারত দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রশ্ন হলো, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পাহাড় কাটা, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করা এবং মানুষের প্রাণহানি রোধে সচেতনতা তৈরিতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে কি?
অতীতে লক্ষ করা গেছে, অন্যসব ক্ষেত্রের মতোই পাহাড় ধসেও প্রাণহানির পর সাময়িক দৌড়ঝাঁপ ও তাৎক্ষণিক কিছু পদক্ষেপের পর ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা সবকিছু ভুলে যান। বলার অপেক্ষা রাখে না, এভাবে চলতে থাকলে পাহাড় ধসে প্রাণহানি, পরিবেশ ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি স্থায়ীভাবে রোধ করা সম্ভব হবে না। পাহাড় ধস ও প্রাণহানি রোধে প্রয়োজন নিয়মিত পর্যবেক্ষণ।
এক যুগেরও বেশি আগে দেশে মর্মান্তিক পাহাড় ধসের ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষাপটে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটি পাহাড় ধস রোধে যেসব সুপারিশ করেছিল, সেগুলো বাস্তবায়নের পাশাপাশি উল্লিখিত পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হলে সবাইকে পরিবেশ সুরক্ষায় আন্তরিক হতে হবে। উল্লেখ্য, পাহাড় কাটার কারণেও পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কা তৈরি হয়।
এছাড়া এটি অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়। কাজেই পাহাড় কাটা রোধ এবং ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ে বসবাসের ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতেও দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
পাশাপাশি পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ ও পুনর্বাসনে নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। স্থানীয় প্রভাবশালী এবং প্রশাসনের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে, তা জোর দিয়ে বলা যায়।